পারভেজ হত্যা বিচারের দাবীতে মানবন্ধন করেছেন এলাকাবাসি। স্ত্রী’র পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। এলাকাবাসি বলছে আত্মহত্যা নয়, পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু, পারভেজে বাবা আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। লাশ ময়না তদন্তের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন ।
শনিবার সকাল ১১ টার দিকে পারভেজ হত্যার ন্যায় বিচারের দাবীতে রামগতি-নোয়াখালী সড়কে খোসাল এলাকায় মানবন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এর আগেও একই দাবীতে একাধিকবার মানবন্ধন করা হয়। এ সময় বক্তারা জানান, স্ত্রী’র পরকীয়া ও অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে পারভেজকে হত্যা করেছে। এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা বলে তারা এর সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আজাদের মেয়ে তাছনূরের সাথে একই ইউনিয়নের চরহাসাহোসেন গ্রামের খোসাল এলাকার জমির আলীর ছেলে পারভেজের বিবাহ হয়। পারভেজ হোন্ডার ওয়ার্কসপের দোকান দিয়ে কাজ করত। সে সুবাধে চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে গিয়াস উদ্দিন মাষ্টারের ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করত। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েলের সাথে পারভেজের স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে জড়াইয়া পড়ে। জুয়েলের সাথে স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থা দেখে পারভেজ প্রতিবাদ করায় তাদের স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে (৯ জুলাই শুক্রবার) মধ্য রাতে স্ত্রী ও জুয়েল সহ কয়েকজন পারভেজকে বালিশ ছাপা দিয়ে হত্যা করে তার পরিবারের লোকজনকে খবর দিয়ে পারভেজ আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শী পারভিন জানান, রাত আড়াইটার দিকে জুয়েল আমাকে মোবাইল ফোনে পারভেজের ঘরে দ্রুত আসতে বলে। আমি এসে দেখি পারভেজ খাটে শুয়ে আছে বহু ডাকাডাকি করেও সাড়া পায়নি। পরে পল্লী চিকিৎসক এসে তাকে দেখে সে মারা গেছে বলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দেয়। মৃত পারভেজের মুখে ও গলায় নখের আঁচড়ের দাগ দেখে মৃত্যু কারণ তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করেছেন বলে তিনি জানান। নিহত পারভেজের ভাড়া বাসার কয়েক’শ দুরে তার বড় বোন পারভিনের বাড়ী।
পল্লী চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দিন মাসুম জানান, মধ্য রাতে আমার ফোনে কল আসে এবং আপর প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছে পারভেজ গলায় রশি দিয়েছে। তখন আমি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিই। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পারভেজকে শোয়ানো অবস্থা দেখি তার শ্বাসপ্রশ্বাস নেই। তার মুখে, মুখের নীচে সামান্য আঁচড় দাগ দেখি। তবে ফঁসি দেওয়া লাশের শরীরে যে ধরণের আলামত থাকার কথা তার কোনটিই দেখা যায়নি।
নিহতের বাবা ও বড় ভাই জানান, তাছনূরের সাথে স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েলের পরকীয়া প্রেম ছিল এবং তাদের উভয়ের অনৈতিক কাজ পারভেজ দেখে প্রতিবাদ করায় ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারাসহ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে পরিকল্পিত ভাবে বালিশ ছাপা দিয়ে হত্যা করেছে পারভেজকে। পুলিশ লাশ নিয়ে যায়, ময়না তদন্ত শেষে তাকে দাপন করা হয়। এ হত্যার ন্যায় বিচার দাবী করেছেন নিহতে পরিবার।
নিহতের স্ত্রী তাছনূর জানান, আমার স্বামী গভীর রাতে ঝগড়া করে আমাকে ও সাড়ে তিন বছরের পুত্র সন্তানকে বের করে দিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমি ও জুয়েল পা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তার ঝুলন্ত লাশ দেখে আমরা নামিয়ে নিই এবং সবাইকে খবর দিই।
ঘটনার বিষয় অভিযুক্ত জুয়েল থেকে জানার জন্য তার বাড়ীতে গেলে বসত ঘরে তালা ঝুলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান তিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক। এ জন্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চরপোড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল আমিন জানান, মৃত্যু খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পারভেজের লাশ দেখি। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী’র অভিযোগ তার স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেন পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায় সে সাথে তার স্ত্রীকেও পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পরে শুনেছি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পারভেজের মৃত্যুতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু আছে। লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।