লক্ষ্মীপুরে গর্ভের শিশু হত্যা দায়ে স্ত্রী সহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা
লক্ষ্মীপুর কমলনগরে তাছলিমা বেগম (২৫) নামীয় এক নারী ও চিকিৎসকসহ ৪জনের বিরুদ্ধে গর্ভস্থ জীবন্ত অজাত শিশু’র মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ আগষ্ট) অভিযুক্ত তাছলিমা বেগমের স্বামী আবদুল আলী বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল কমলনগর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাদী তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম (২৫), সমন্দী জাহাঙ্গীর, শ্বাশুড়ী মনোয়ারা বেগম ও ডা: মোবারক হোসেনকে আসামী করে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩১৫, ৩১৬ ও ১০৯ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।
জেলার কমলনগর উপজেলার পাটারীরহাট ইউনিয়নের হামিদ আলীর পুত্র আবদুল আলী। একই উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের নুরুল ইসলামের মেয়ে তাছলিমা বেগম।
এদিকে জানায়ায়, আবদুল আলীর পূর্বের স্ত্রী মারা যাওয়া এবং তাছলিমার পূর্বের স্বামীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ৭মাস পূর্বে তারা একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বাদীর মামলার অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, প্রায় ৬/৭ মাস পূর্বে আবদুল আলীর সাথে তাছলিমার বিবাহ হয়। বিভিন্ন প্রকার স্বর্ণালংকার দিয়ে সম্পূর্ণ স্ত্রী মর্যাদায় তাছলিমাকে আবদুল আলীর জজিয়তে তুলে আনে। কিছুদিন ঘরসংসার করে মা ও ভাইয়ের প্ররোচনায় পড়ে গত ৬আগষ্ট’২০২০ইং পিতার বাড়িতে চলে যায় তাছলিমা। পরে তাছলিমা ১৩/৮/২০২০ইং হাজিরহাট বাজারে ডা: মোবারক হোসেনের পরামর্শ নিলে তিনি ডাক্তারে কাছ থেকে অন্ত: স্বত্বা হওয়ার খবর জানেন। এ খবর জানার পর আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে তাছলিমাকে অন্যত্রে বিবাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আসামী ডাঃ মোবারক বাদীর স্ত্রী’র গর্ভের শিশুটি মৃত্যুর জন্য অতিমাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করায় ব্যাপক রক্তক্ষণ হয়। অবশেষে তাছলিমা একটি মৃত বাচ্ছা প্রসব করে। তাছাড়া রক্তক্ষরনের কারনে বাদীকে না জানিয়ে বাদীর স্ত্রী’কে লক্ষ্মীপুর হাসপতালে আনিলে খবর পেয়ে বাদী হাসপাতাল আসলে তাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন দিলে তিনি ঔষধ আনতে গেলে এ সুযোগে আসামীগণ হাসপাতাল থেকে চলে যায়। মৃত বাচ্ছাটি তাছলিমার পিতার বসত ঘরের দক্ষিন পার্শ্বে গর্তে মাটি চাপা দেয়।
আবদুল আলী জানান, তাছলিমাকে বিবাহ করার পর তার বেপরোয়া চলাফেরায় আমি অতিষ্ঠ। তবুও সংসার সুখের কথা চিন্তা করে সবই সহ্য করে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অন্ত:স্বত্বা ছিল, শ্বাশুড়ী, সমন্দী ও ডা: মোবারক মিলে আমার সন্তানটি হত্যার সহযোগিতা করে। পরে স্ত্রীর গর্ভের সন্তান মারা গেলে এ ব্যাপারে আমার সমন্দী জাহাঙ্গীরের নিকট জানতে চাইলে তিনি আমার মৃত্যু কামনা করে মারার জন্য উদ্যত্ত হয়ে আমার স্ত্রীকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিবে বলে ধমক দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, তাছলিমা সহ তার মা ও ভাই আমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে অন্য জায়গায় তাকে বিয়ে দিতে অসৎ উপায়ে আমার আমার স্ত্রী’র গর্ভের বাচ্ছাটি মেরে ফেলে। তিনি এ হত্যার ন্যায় বিচার পেতে কোর্টে এ মামলা করেছেন বলে জানান।
সাবেক ইউপি সদস্য আবুল বাশার বাকি জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ঔষধ সেবনে গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়ে আবদুল আলী আমাকে জানালে
আমি ডাঃ মোবারকের নিকট গিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজের ভূলের কথা স্বীকার করে এবং বিষয়টি আমার মাধ্যমে মিমাংসা প্রস্তাব দেয়।
স্থানীয় হাজি জামাল ও মোঃ জাহাঙ্গীর জানান, ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ সেবনে আবদুল আলীর স্ত্রী গর্ভের সন্তান মৃত্যুর ঘটনাটি সঠিক। তবে আবদুল আলীর দায়িত্বে স্ত্রী’কে ডাক্তারের নিকট নিয়ে চিকিৎসা করালে এমন দূর্ঘটনা ঘটতনা বলে মত প্রকাশ করেন তারা।
সায়েদুল হক জানান, আবদুল আলীর স্ত্রী তাছলিমা অন্ত:স্বত্বা হওয়ার কিছুদিন পর তার পিতার বাড়ী চলে যায়। তার গর্ভের সন্তানটি ওই বাড়ীতে নষ্ট করে ফেলে।
অদ্যাবধি আবদুল আলীর সংসারে ফিরে আসেনি স্ত্রী।
তাছলিমা বেগমের পিতা নুরুল ইসলাম তার মেয়ের গর্ভের শিশু মৃত্যু’র কথা স্বীকার করেন এবং ডাক্তারের ঔষধ সেবনে এমন ঘটনা ঘটছে বলেও তিনি দাবী করেন।
তাছলিমা আক্তার নামে এক রোগী তার কাছ থেকে দুইবার চিকিৎসা নিয়েছেন বলে ডা: মোবারক হোসেন স্বীকার করেন। তবে ওই রোগির গর্ভের শিশু মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।